ঢাকা,শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

“ভ্রাম্যমান আদালতের ছাগলের বিচার”

:: এম.আর মাহমুদ ::

উপজেলা পরিষদের সৌন্দর্য্য বর্ধনকারী ফুল বাগানের ফুল গাছের পাতা খাওয়ার অপরাধে একটি ছাগলকে ১০ দিন কারা ভোগ করতে হয়েছে। অতঃপর ২ হাজার টাকা অর্থ দন্ড দিয়ে মুক্তি মিলেছে ছাগলটির। কথায় আছে ‘পাগলে কিনা বলে ছাগলে কিনা খায়’। প্রবাদটি সব পুরনো হলেও প্রায় মানুষের মুখে শোনা যায়। ছাগল সবকিছু খেলেও এমন দন্ডের খবর অতীতে শোনা যায়নি। তবে ছাগলের সাজা হওয়া অনেকটা যুক্তি সঙ্গত। সাজা দিয়েছেন দেশের কোন বিচারিক আদালতে নয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) অপরাধী ছাগলের বিচার করে মালিককে অর্থ দন্ড দিয়েছে। তবে হতদরিদ্র ছাগলের মালিক অর্থ দন্ড পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ছাগলকে ১০ দিনের কারা ভোগ করতে হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায়। ওই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সীমা শারমিন লাখ টাকার ফুল বাগানে ৫ হাজার টাকা মূল্যের ছাগল কর্তৃক ফুল বাগানের পাতা খাওয়ায় বিরক্ত হয়ে রীতিমত ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে ছাগলের মালিক শাহারা বেগমকে ২ হাজার টাকার অর্থ দন্ড দিয়েছে। কিন্তু হতভাগা ছাগল মালিকের পক্ষে এ পরিমাণ অর্থ দন্ড পরিশোধ করা সম্ভব না হওয়ায় ১০ দিন ধরে ছাগলটি আটকিয়ে রেখেছে। ছাগলের মালিক তার পোষা ছাগলটি মুক্ত করার জন্য অনেকের কাছে দৌঁড়াদোঁড়ি করেছে কিন্তু সুফল পায়নি। পরে উপজেলা চেয়ারম্যানের নজরে আসলে তিনি হয়তো জনপ্রতিনিধি বলে নিজে অর্থ দন্ডের ২ হাজার টাকা পরিশোধ করে ছাগলটি মালিকের কাছে হস্তান্তর করেছে। কথায় আছে ‘হাকিম নড়ে তবে হকুম নড়ে না’। যা প্রমাণ করে ছাড়লেন ওই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) সীমা শারমিন। তবে তবে ভ্রাম্যমান আদালত কর্তৃক ছাগলের বিচার একটি দৃষ্টান্ত যা গ্রিনিজ বুকে স্থান পাওয়ার যোগ্য। এ সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর অসংখ্য মানুষ মন্তব্য করতে শোনা গেছে, রাষ্ট্রীয় কোষাগারের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হলেও লুটপাটকারীরা আইনের জালে আটকা পড়লেও ছাগলের মত তাৎক্ষণিক বিচার হয়নি। হয়তো মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব বলে। গবাদি পশু অপরাধ দমনের জন্য এক সময় প্রতিটি গ্রামে ‘খোয়াট ছিল’। যা ইউনিয়ন পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। বর্তমানে খোয়াট প্রথা নেই বললেই চলে। তবে খোয়াট প্রথা চালু থাকলেই ভ্রাম্যমান আদালতে ছাগলের বিচার করতে হত না। ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে ছাগলের বিচারের কারণে ভ্রাম্যমান আদালতের বিচার নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা কৌতুহলের জন্ম দিয়েছে। বিচার ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের মত নাখান্দা পাবলিকের পক্ষে মন্তব্য করাটা অনেকটা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। কারণ যিনি ছাগলের অপরাধে অর্থদন্ড করেছেন তিনি একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আমার চাইতে শতগুণ যোগ্যতার অধিকারী। কবিগুরু রবি ঠাকুরের ভাষায় বলতে হয় ‘বড় চোর বড় বীর থাকে তার উঁচু শির।’

লেখক : এম আর মাহমুদ -দৈনিক সমকাল  চকরিয়া প্রতিনিধি ও সভাপতি -চকরিয়া প্রেসক্লাব, কক্সবাজার।

 

পাঠকের মতামত: